টমটম চালকের হঠাৎ আলিশান জীবন-যাপন; নৈপথ্যে মাদক ব্যবসা

আরফাতুল মজিদ

কখনো সদর থানা পুলিশ, কখনো চেয়ারম্যান, আবার কখনো কাউন্সিলর ও রাজনৈতিক ব্যক্তির সাথে সেলফি তুলে নিজের ফেইসবুক আইডিতে পোষ্ট দিচ্ছেন আবুল হাশেম নামে এক ইজিবাইক (টমটম) চালক। বিভিন্ন সময় তিনি সব স্তরের মানুষদের সাথে সেলফি তুলে ফেইসবুকের মাধ্যমে জানান দিচ্ছে সবাইকে। হঠাৎ আবুল হাশেমের বিলাসবহুল চলাফেরা এবং ভিআইপিদের সাথে উঠবস করা এক প্রকার গুঞ্জন শুরু হয়েছে কক্সবাজার শহরে ও তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের চন্দনাইশ বৈইলতলী গ্রামে। বৈইলতলী গ্রামের মুন্সিপুকুর পাড়া কমলাবাপের বাড়ির মৃত নুর আহমদের ছেলে আবুল হাশেম।

১০ বছর আগে কক্সবাজার শহরে এসে ভাড়ায় চালিত ইজিবাইক (টমটম) চালাতেন আবুল হাশেম। গত দুই বছর আগেও তিনি ভাড়া নিয়ে টমটম চালাতেন কক্সবাজার শহরের কলাতলী এলাকায়। এখন তিনি আলিশান গাড়ি ছাড়া চলফেলা করে না। খাওয়া-দাওয়া নামিদামি রেস্তোরায়। তারকামানের হোটেলে তার রাত যাপন। হঠাৎ এতো কিছুর রহস্য অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেরিয়ে এলো কলাতলী হোটেল মোটেল জোনে তারা মাদক ও নারী ব্যবসা। মাদক ও নারী ব্যবসায় জড়িয়ে টমটম চালক থেকে বর্তমানে হাশেম কোটি কোটি টাকার মালিক। তার এসব অপর্কম আড়াল করতে তিনি বিভিন্ন সময় পুলিশ, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের সাথে সেলফি তুলে নিজের আইডিতে পোষ্ট করেন বলে জানান গেছে। তবে কক্সবাজার সদর থানার বেশ কয়েকজন এএসআই ও এসআই এর সাথে তার গভীর সখ্যতা রয়েছে। এই সুবাদে তার অবৈধ ব্যবসা কিছুটা ধামাচাপা রয়েছে বলে কিছু কটেজ ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজারে এসে প্রথমে ভাড়ায় টমটম চালাতেন হাশেম। টমটম চালানোর সূত্র ধরে তার পরিচয় হয়ে উঠে লাইট হাউজস্থ কটেজ জোনে। এরপর টমটম চালানোর আড়ালে কটেজে নিয়মিত নারী (পতিতা) সরবরাহ দেন তিনি। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পতিতা এনে রাখেন কটেজ জোনে। এরপর বিভিন্ন হোটেলে সরবরাহ দেন। একই সাথে মদের ব্যবসা চালিয়ে যান সমানতালে। মদের পাশাপাশি গাঁজা ও ইয়াবা ব্যবসা করেন। একপ্রকার তার এসব অবৈধ ব্যবসা প্রকাশ্যে হয়ে উঠে। কয়েক মাস আগে পুলিশের একটি অভিযানে মদের বোতল রেখে পালিয়ে যায় হাশেম। এই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মাদকের মামলাও দায়ের করা হয়েছে। তারপরও তিনি প্রকাশ্যে ঘুরছেন। বিভিন্ন জনের সাথে সেলফি তুলে ফেইসবুকে ছড়িয়ে দিচ্ছে।

কটেজের কয়েকজন মালিক জানিয়েছে, হাশেমের দৃশ্যমান কিছু নেই। আগে টমটম চালাত। এখন নিয়মিত কটেজ জোনে পড়ে থাকেন। এই সুবাদে জড়িয়ে পড়ে নারী ও মাদক ব্যবসায়ে। তবে তার সাথে বিভিন্ন সময় একাধিক পুলিশ সদস্যকে দেখা যায়। এমনকি গভীররাতে একাধিক মোটর সাইকেল নিয়ে পুলিশের সাথে তার চলাফেরাও দৃশ্যমান।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে আবুল হাশেমের মুঠোফোনে একাধিক যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি। এতে তার বক্তব্য পাওয়া যায়।

দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে কক্সবাজার সদর থানার ওসি ফরিদ উদ্দিন খন্দকার বলেন, আবুল হাশেমের বিরুদ্ধে কোন মামলা বা অভিযোগ আছে কিনা বলতে পারছি না এখন। তবে একটু সময় নিয়ে দেখে বলতে হবে। যদি তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা থাকে তাহলে অভিযান চালিয়ে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করবে। এছাড়া কোন পুলিশ সদস্যের সাথে তার সখ্যতা রয়েছে এমন প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।